সাব-সাহারান আফ্রিকা জুড়ে একটি প্রথা প্রচলিত আছে যে বিয়ে করার জন্য কনের মূল্য বাবদ বড় অংকের অর্থ পরিশোধ করতে হয় বরপক্ষকে। কিন্তু গানাইয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণী অ্যাঞ্জেলা এটিকে ‘কনের ক্রয়মূল্য’ হিসেবে দেখতে রাজী নন।
“আমি বরং এটাকে অন্যভাবে দেখি। আমার বাগদত্তা এবং তার পরিবার আমাকে বিবেচনা করছে এমন এক মূল্যবান সম্পদ হিসেবে, যা তাদের ঘরে যাচ্ছে।”
কনের মূল্য নানাভাবে পরিশোধ করা যায়। নগদ অর্থে কিংবা উপহার দিয়ে, অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে দুটি দিয়েই।
একবারেই এটি পরিশোধ করার কথা, তবে কিস্তিতে পরিশোধের ঘটনাও অস্বাভাবিক নয়। এই সামাজিক প্রথার প্রচলন আছে থাইল্যাণ্ডে, চীনে এবং পাপুয়া নিউ গিনিতেও।
অ্যাঞ্জেলা তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মেনে চলেন, এই প্রথাটিকে তিনি তার অংশ বলেই মনে করেন।
“আফ্রিকানরা তাদের আফ্রিকান ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। একটা সময় ছিল, যখন হয়তো আফ্রিকান পরিচয়টা বড়াই করে বলার মতো কোন পরিচয় ছিল না। কিন্তু এখন আপনি দেখছেন, সবাই কিভাবে আফ্রিকান সংস্কৃতিকে আলিঙ্গন করছে।”
অ্যাঞ্জেলার স্বামী জিওফ্রে নিজেও একজন গানাইয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ। তিনি অ্যাঞ্জেলাকে বিয়ে করার জন্য যে অর্থ দিয়েছেন, সেটিকে দেখেন কনের পরিবারের প্রতি একধরণের সন্মানের প্রতীক হিসেবে।
“তবে এই মূল্য যদি এই প্রতীকী ব্যাপারটাকে ছাড়িয়ে যায়, তখন আসলে এটি কনের জন্য মূল্য পরিশোধের মতো ব্যাপার বলে মনে হতে পারে”, বলছেন তিনি।
‘তুমি বিক্রির জন্য নও, কেউ তোমাকে কিনতে পারবে না’
আইনগত আনুষ্ঠানিকতার আগে জিওফ্রে এবং অ্যাঞ্জেলা গানার সামাজিক রীতি অনুসারেই তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করেছিলেন।
এই অনুষ্ঠানের সময়েই জিওফ্রের পরিবারের পক্ষ থেকে ‘কনের মূল্য’ বাবদ অর্থ এবং উপহার অ্যাঞ্জেলার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়।
তবে এই দম্পতি সামাজিক রীতিটিকে একটু বদলে নিয়েছেন নিজেদের মতো করে। “কনের মূল্য হিসেবে যা দেয়া হয়েছিল, তা আবার নববিবাহিত দম্পতি হিসেবে আমাদেরকেই উপহার দেয়া হয়।”
অ্যাঞ্জেলা বলেন, “আমার মা শুরু থেকেই এ বিষয়ে আমাকে পরিস্কার বলে দিয়েছেন, সব সময় বলেছেন, তুমি বিক্রির জন্য নও, কেউ তোমাকে কিনতে পারবে না।”
কনের দাম কত হবে, তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম। জিওফ্রে বলছেন, তার বেলায় এটা খুব কমই ছিল, অংকটা ছিল কয়েকশোর ঘরে।
কিন্তু ডার্বি শহরের বাসিন্দা ব্লেসিং এবং চেলসীর বেলায় ব্যাপারটা ছিল একটু ভিন্ন।
ব্লেসিং এসেছেন জিম্বাবুয়ে থেকে। তিনি বলছেন, কনের দাম পরিশোধ করতে তাকে দ্বিতীয় একটি চাকুরি নিতে হয়েছিল।
কনের মূল্য হিসেবে যে অংক তাকে দিতে হয়েছিল, সেটি তার ভাষায়, “একটা বাড়ি কেনার ব্যাংক ঋণের জন্য যে ডিপোজিট দিতে হয়, প্রায় তার কাছাকাছি।”
সনাতনী রীতিতে বিয়ে করতে শুরুতে চেলসী রাজী ছিলেন না। কারণ তার বাবা তখন মারা গেছেন।
“তখন আমি বলছিলাম…. এই অর্থ কে নেবে? কারণ এই অর্থ নেয়ার কথা আমার মা কিংবা বাবার। আমার মনে হয়েছিল এই অর্থ নেয়টা ঠিক হবে না।”
কিন্তু ব্লেসিং রাজী করালেন তাকে। যদিও বিরাট অংকের অর্থ এই বাবদ খরচ হয়েছে, তারপরও ব্লেসিং মনে করেন, এর দরকার ছিল।
যদি এই অর্থ তিনি দিতে না পারতেন, তাহলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তার স্ত্রীর পরিবারের কাছে যেতেই পারতেন না।
এটি স্পষ্ট নয়, কনের জন্য দাম পরিশোধের এই প্রথাটি কবে থেকে আফ্রিকায় চালু হয়। তবে অনেক দেশেই মূদ্রা চালুর আগে থেকেই এই প্রথা প্রচলিত।
বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই প্রথাটি নানা ভাবে চালু আছে।
ইভলিন শিলার উগান্ডায় এই প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তার বিশ্বাস, গত তিন প্রজন্মে এই প্রথা অনেক বদলে গেছে।
“আজকের দিনে কথা ভাবুন, এখনকার উপহারগুলো কিরকম দামী। এগুলোর আর্থিক মূল্য আছে, সেকারণেই এখন বিষয়টিকে ‘মূল্য’ বলে দেখা হচ্ছে।”
২০১৫ সাল উগান্ডার সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে ‘কনের দাম’ পরিশোধের ব্যাপারটি ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু কোন দম্পতির মধ্যে যদি বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তখন এই ‘মূল্য’ ফেরত চাওয়া বে-আইনি।
ব্রিটেনে জন্ম নেয়া নাইজেরিয়ান পডকাস্টার টলি টি অবশ্য এই প্রথাটি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন।
“আমার সন্তানের জন্য কেউ আমাকে অর্থ দিচ্ছে, ব্যাপারটা এরকম, যেন কেউ তার মালিকানা নিচ্ছে।”
“আমি একজন ভালো স্ত্রী হবো কীনা, তার সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?”
“আমার মনে হয় না, আমরা যারা নতুন প্রজন্মের কৃষ্ণাঙ্গ বৃটিশ বা নাইজেরিয়ান ব্রিটিশ, আমরা আর আমাদের নিজেদের সংস্কৃতির অংশ।”
“আমরা আমাদের কিছু অংশ নিচ্ছিল আফ্রিকান ঐতিহ্য থেকে, কিছু ব্রিটিশ ঐতিহ্য থেকে।”
“কাজেই আমরা একটা নতুন ‘সাবকালচার’ তৈরি করেছি, যেখানে আমরা যে কোন কিছুর ব্যাপারে প্রশ্ন তুলি, এবং যদি সেটি আমাদের কাছ অর্থপূর্ণ বলে মনে হয়, তখনই আমরা সেটিকে গ্রহণ করি”, বলছেন তিনি।