করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় বেশ কিছু রাজ্য লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষপাতী। একই পরামর্শ দিচ্ছেন কোনও কোনও বিশেষজ্ঞও। সরকারের এক শীর্ষ সূত্রের খবর, কেন্দ্রও সেই অভিমুখেই ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে।
লকডাউন কার্যকর করেও দেশে সংক্রমণের সংখ্যা কমছে না। বরং প্রতি দিনই বাড়ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় রিপোর্ট অনুযায়ী ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪২১। মৃত্যু হয়েছে ১১৪ জনের। এমন পরিস্থিতিতে কী পদক্ষেপ করা হবে তা পর্যালোচনার জন্য সোমবার ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে একদফা বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখতে বলেন তিনি। ওই দিনই মোদী বলেন, আরও লম্বা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের। তার পর থেকেই জোর জল্পনা শুরু হয়ে যায় তা হলে কি লকডাউনের সময়সীমা বাড়তে চলেছে?
লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু না বলা হলেও, ১৪ এপ্রিলের পরও লকডাউন বহাল রাখা নিয়ে ইতিমধ্যেই ভাবনা চিন্তা শুরু করে দিয়েছে একাধিক রাজ্য, যাদের মধ্যে অন্যতম হল উত্তরপ্রদেশ। রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অবনীশ অবস্থি বলেন, ‘‘রাজ্য সম্পূর্ণ ভাবে করোনা মুক্ত হলে, তার পরেই লকডাউন তুলে নেওয়া হবে। রাজ্যে এক জন করোনা আক্রান্তও যদি থেকে থাকেন, সেই অবস্থায় লকডাউন তোলা কঠিন হবে। তাই এতে সময় লাগতে পারে।’’
ওই বৈঠকে লকডাউনের মেয়াদ ৩ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। চন্দ্রশেখর বলেন, “আমার ব্যক্তিগত মত হল লকডাউন জারি রাখা প্রয়োজন। আগে জীবন বাঁচানো প্রয়োজন। তার পর অর্থনীতিকে বাঁচানো যাবে।” দেশের করোনা আক্রান্ত রাজ্যের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে তেলঙ্গানা। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩২১। একই সুর ধরা পড়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের গলাতেও। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বে প্রতি মুহূর্তে কী ঘটছে, সে দিকে নজর রেখেছি আমরা। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঠিক সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।’’
লকডাউন একবারে তুলে নেওয়া হবে, না কি ধাপে ধাপে তোলা হবে তা নিয়েও বিস্তর জল্পনা চলছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত যেমন লকডাউন ধাপে ধাপে তোলার পক্ষে সওয়াল করেছেন। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে লকডাউন তুলে নেওয়া উচিত নয়। ধাপে ধাপে তোলা প্রয়োজন।” বিজেপি সরকার পরিচালিত আসাম আবার বলেছে, কেন্দ্র সরকার লকডাউনের ব্যাপারে যা প্রস্তাব দেবে তারা সেটাই সমর্থন করবে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, “লকডাউন কোন পদ্ধতিতে তোলা হবে রাজ্য সরকার তা নিয়ে আলোচনা করেছে। ১৫ এপ্রিল সকালে সব কিছু খুলে যাক সেটা আমরা চাই না। নির্দিষ্ট নিয়ম এবং বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি মেনে যাতে লকডাউন তোলা হয় সেটাই চাইছি।”
করোনার প্রকোপ ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে দেশে ২১ দিনব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। যে দিন প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা করেন, সে দিন সব মিলিয়ে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫১৯। ১৪ দিনের মধ্যে তা ৪ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। সরকারি সূত্রে খবর, দেশে এখনও পর্যন্ত যত জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশই মূলত ৬২টি জেলার।