আমেরিকার ডনি ডেকার। তাঁরই নাম হয়েছিল ‘রেনবয়’। যখন তখন, যেখানে খুশি বৃষ্টি নামিয়ে আনার জন্য। তার পর?
আমরা মানি বা না-ই মানি, কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এমন অদ্ভুত এক একটা ক্ষমতা থাকে যে, নিজের চোখে তা দেখার পর অজ্ঞাতেই আমাদের মনে প্রথম যে ভাবনাটা আসে, তা হল—‘অলৌকিক’ পর্যায়ের কোনও অপ্রাকৃতিক ব্যাপার বোধ হয় আছেই আছে! এই যেমন কি না আমেরিকার ডনি ডেকারের ঘটনাটা। ১৯৮৩-তে লোকের মুখে মুখে যে-ছোকরার নামই হয়ে গেছিল ‘দ্য রেন বয়’—বাংলায় একটু অন্য ভাবে বললে যা দাঁড়াবে ‘বর্ষাকিশোর’! কিন্তু কেন এমন একটা উদ্ভট নাম জুটবে কারও? আসলে চাইলেই যে-কোনও বাড়ির যে-কোনও ঘরের যে-কোনও ছাদের নীচে বসেই, যখন খুশি তখন বৃষ্টি নামিয়ে আনতে পারত ডনি ডেকার নামের বিস্ময়-কিশোরটি।
কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না? তা হলে দেখা যাক, কী কাণ্ড ঘটিয়েছিল সেই ছোকরা! ১৯৮৩-তে এক বন্ধুর বাড়িতে বসে থাকাকালীন হঠাৎই একদিন কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ডনি। অনেকটা ঠিক ওই ভরে পড়ার মতন অবস্থা। তা, বহুক্ষণ ধরে রয়ে যাওয়া ওর সেই অবস্থাটা কাটতেই দেখা গেল, ঘরের ছাদ থেকে বড় অদ্ভুত ভাবেই এক অসময়ের জলের ধারা চুঁইয়ে নামছে সমানে, আর বিচিত্র একটা কুয়াশায় যেন ঢেকে যাচ্ছে গোটা ঘরখানা! সেই দৃশ্য দেখে তো ভীষণ ভয় পেয়ে তখনই ওই বাড়ির মালিককে ডেকে আনে ডনির বন্ধুরা। কিন্তু তিনি নিজেও ওই বিচিত্র দৃশ্য দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে যান।
এর কিছু দিন পরেই ফের একই কাণ্ড ঘটিয়ে বসল ডনি। তবে এ বার আর কারও বাড়িতে নয়। কয়েকজন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যে-রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিল সে—সেখানে! আসলে ওখানেও তার হঠাৎই অমন ভরে পড়ার মতো অবস্থা হওয়ার পরই রেস্তোরাঁর ছাদ থেকে হু-হু করে বৃষ্টির জল পড়তে শুরু করে ডনি ও তার বন্ধুদের মাথার উপরে! তবে এ বার কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই ওই ভূতুড়ে জল পড়ার কাণ্ড দেখে, রেস্তোরাঁ মালিক আর কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে, স্রেফ ডনিকেই রাস্তায় বার করে দেন সৌজন্যের লেশটুকুও না রেখেই! সম্ভবত বন্ধুর বাড়িতে ডনির সেই অকালবৃষ্টি ঘটানোর খবরটা তাঁর কানেও উঠেছিল ইতিমধ্যেই।
যাই হোক, এই ঘটনারও বছর কয়েক পরে খুবই তুচ্ছ কী একটা অপরাধের জন্য যেন ডনিকে জেলে যেতে হয়—এবং সেখানেও দেখা যায়, আবারও ওই অভাবনীয় ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটতে শুরু করেছে! অর্থাৎ ডনির কয়েদখানা ভাসিয়ে হঠাৎই এক-একদিন কোত্থেকে একগাদা করে রহস্যময় বৃষ্টির জল ঢুকে পড়ছে হু-হু করে। শেষে অন্যান্য কয়েদিরা একদিন জেলের বারান্দা-উঠোন ভাসানো ওই বিপুল জল দেখে খেপে গিয়ে যখন জেলার সাহেবকে ডেকে আনে ঘটনাটা দেখাতে—তখনই অবশেষে তাঁর কাছে সব কিছু স্বীকার করে নেয় ডনি এবং জানায়, হ্যাঁ, যে-কোনও জায়গায় এবং যখন খুশি সে বৃষ্টি নামাতে পারে বইকি! আর তা পারে বছর কয়েক আগে তার ভিতরে ঢুকে-পড়া এক বিশেষ ক্ষমতার বলে।
আর শুধু তা-ই নয়, জেলার সাহেব ওর এই আপাত-আজগুবি কথা মানতে না চাওয়ায়, তাঁর পছন্দমতো এক জায়গাতেই অত্যন্ত মজবুত এক ঘরের ছাদ ভেদ করে ডনি একেবারে আপাদমস্তক বৃষ্টিজলে স্নান করিয়ে দেয় জেলার সাহেবকে! ফলে অচিরাৎ সেই খবর সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে একেবারে যেন দাবানলের মতন। তবে কি না অবিকল শুরুর মতোই এ কাহিনির শেষটুকুও বড্ড বেশি বেয়াড়া আর অদ্ভুত। কেননা, সাজার মেয়াদ ফুরোনোর পর জেল থেকে যখন ছাড়া পায় ডনি—তার ওই বিচিত্র ক্ষমতার অভিশাপ আর কাউকে দেখাতে না চেয়েই সম্ভবত—কোথায় যে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় সেই ছোকরা, তার হদিশ আর কেউই পায়নি কখনও!