ওমর তানজিম
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। এ উপলক্ষ্যে “বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ”একটি রিসার্চধর্মী ধারাবাহিক আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু করেছে এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশ। ৪ অক্টোবর,২০২১ সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯ রিসার্চধর্মী অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
উদ্বোধন করেন ইউ কে প্রবাসী জনাব কামাল দেওয়ান কেডি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট (BLF) অপারেশন ‘হিট অ্যান্ড রান।
তিনি এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং ই সি কমিটির চেয়ারম্যান।অনুষ্ঠানটি গবেষণা, পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় থাকছেন জাহিদুজ্জামান সাঈদ, প্রধান সম্পাদক, এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানটির গবেষণা, পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় থাকছেন জাহিদুজ্জামান সাঈদ। প্রধান সম্পাদক, এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা
আব্দুর রহিম পাকন। উপদেষ্টা সদস্য পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ।
স্পেশাল গেস্ট এম এ ফারুক প্রিন্স। সদস্য, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি ইউথ এন্ড স্পোর্টস, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
ভোট অফ থ্যাংকস এর মাধ্যমে দর্শক - শ্রোতা ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের সম্মানীত করেন জনাব বাবুল ইসলাম। চেয়ারম্যান, এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন,ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া। জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ‘নর্থ রাইন ভেস্ট ফালেন’ NRW প্রভিন্স এর কনসাল এবং জার্মানিতে ফর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশের সম্পাদকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্যদিয়ে তিনি তার আলোচনা শুরু করেন।
অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তিনি বলেন, এখানে দুজন সম্মানীত বীর মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত আছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল দেওয়ান ভাই, আমার খুব অন্তরের মানুষ।একটা কথা না বললেই নয়, উনি যখন জার্মানিতে ছিলেন বঙ্গবন্ধু নিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের অনেক আলোচনা হয়েছে।কিভাবে হত্যার প্রতিবাদ করা যেতে পারে, প্রতিবাদের ভাষা কি হতে পারে এসব নিয়ে।
আশির দশকে ছাত্র রাজনীতি যিনি আগলে রেখেছিলেন, আমাদেরকে যিনি আগলে রেখেছিলেন শ্রদ্ধেয় আওরঙ্গ দা, কামাল ভাইয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, এখানে উপস্থিত আছেন আব্দুর রহিম পাকন ভাই। যিনি দেশে এবং প্রবাসে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামীলীগের একজন সংগঠন হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক মূল্যবান বক্তব্য রেখে গেছেন তিনি। আমি মনে করি আমাদের এই এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশে যে উদ্যেশ্য এবং যে চিন্তাধারা থেকে আমরা একত্রিত হয়েছি-আগামীতে আমরা যাদের সংযোগ করবো এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, সেই দিকনির্দেশিনা তিনি দিয়ে গেছেন।সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে আপনারা যার বঙ্গবন্ধুর হত্যা এবং তারপর বঙ্গবন্ধু বিহীন যারা বড় হয়েছে তাদের আলোচনায় এনেছেন।
প্রিন্স ভাই সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলে, তিনি যে দায়ীত্ব নিয়ে কাজ করছেন তার কাছে অনেককিছু শিখবার আছে।
তিনি বলেন, ইউ এস এ থেকে উপস্থিত আছেন বাবুল ভাই, তিনি একজন সংগঠক, একজন মুজিব আদর্শে আদর্শিত মানুষ,আলোকিত মানুষ এবং প্রতিনিয়ত নেত্রী, বাংলাদেশের জনগন এবং আদর্শ নিয়ে তিনি চিন্তা করেন।
অনেকে অনেক কথা বলে গেছেন।আমি প্রবাসের কথা বলবো। আমি যে কথাটি বলবো, প্রবাসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা বলা,বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যারা চিন্তা করেন, এই ধরনের একটি প্লাটফর্মের সত্যি সত্যি খুব অভাব। আমি তা প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করি।আমরা বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্নভাবে পৌছে দিতে পারি। যেমন আমার সংগঠন “ফর বাংলাদেশ” স্বাস্থ্য এবং এডুকেশন নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশের জন্যে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্নেহ, ভালোবাসা,আদর্শে আমরা সংগঠনটি করি।এটি একটি রেজিস্টার্ড সংগঠন। ২০১০ সাল থেকে কাজ করে আসছে।বিভিন্ন ক্রাইসিসে সংগঠনটি দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে সবসময়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে বুঝতে হলে তার জীবন, দর্শন, তার সামাজিক চিন্তাধারা, রাজনৈতিক চিন্তাধারা, ধর্মীয় চিন্তাধারা, উনি কোত্থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারনা আনলেন, এটি বুঝতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার উপর তিনি জোর দেন। তিনি মনে করেন এন্টারপ্রেনার বাংলাদেশে একটা অনুষ্ঠান করা দরকার যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ধাপে ধাপে আলোচনা করা যেতে পারে, যার মধ্য দিয়ে আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম, বঙ্গবন্ধু বিহীন যারা বেড়ে উঠেছে তারা বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারবেন, বুঝতে পারবেন।
ইংরেজরা দুইশত বছর শাসন করার পর আমরা ভেবেছিলাম এমন একটি রাষ্ট্র গঠন হবে; এক জাতি এবং এক ভাষার নিরিখে সমাজের অবহেলিত মানুষগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে সেখানে। কিন্ত তা হয় নাই।
১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ছাত্রলীগ গঠন করেন তখন তিনি উপলব্ধি করেছিলেন নবীন ও প্রবীণের সমন্বয় দরকার।
কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি।দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি।কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন।ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা।
যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন আদমজীর দাঙ্গা।পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্র যার ফলশ্রুতিতে ৭১ এর যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা পেয়েছি, এটা কিন্তু ছিলো সমাজের অবহেলিত এবং যারা নিপীড়িত মানুষ একটা রাষ্ট্রে সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারবে এমন ভাবনায় গড়ে উঠা রাষ্ট্র।
তিনি আরো বলেন ধর্মনিরপেক্ষতা, এটি একটি বিশাল আলোচনা, গতমাসে আমি যখন জার্মান প্রেসিডেন্টকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটা দিলাম,তখন উনি একটা কথা বলেছে যে, বঙ্গবন্ধু এমন একজন ব্যাক্তি ছিলেন, তিনি যখন ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে গেছেন,তখন পৃথিবীর মানুষ এটি চিন্তাই করে নাই।আমরা ইউরোপ কিম্বা অন্যান্য উন্নত দেশ থেকে অনেক এগিয়ে আছি।বঙ্গবন্ধু কিন্তু দেখিয়ে দিয়ে গেছেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ কিভাবে একসাথে বসবাস করতে পারেন।উনি সমাজতন্ত্রের কথা বলেগেছেন, উনি গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথাগুলো বলা জরুরী। আমি মনে করি নতুন প্রজন্মের কাছে তাকে পৌছে দিতে হবে।
তিনি বলেন,সৈয়দ আশরাফ জার্মানিতে এলে উনার সাথে আমার কিছুদিন একসাথে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিলো।তিনি বলতেন, আওয়ামীলীগ কিন্তু একটি দর্শন, একটি অনুভূতির নাম।আওয়ামীলীগ এবং বঙ্গবন্ধুকে যে বুঝবে সে কিন্তু সহজে অন্যায় করতে পারবে না। এই বিষয়গুলো আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের কাছে বপন করতে হবে,তাহলেই আমাদের স্বার্থকতা আসবে।
ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব, তার কৃষি ভাবনা, কৃষক ভাবনা নিয়ে কথা বলে। উনার বাবা ছিলে ডিপার্টমেন্ট অব কো-অপারেটিভ এর চেয়ারম্যান।
তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ হিসেবে মনে প্রানে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এক সোনালী অধ্যায়ের নাম কৃষি ও কৃষক। জন্মগত ভাবে সে একজন উদ্যোক্তা।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা হলও সেখানে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর যেভাবে কাজ শুরু করে বাঙলার সকল শ্রেণির মানুষ, দলকে একত্রিত করেছেন সেখানে উনি আজকে সারা বাংলাকে পুরো বিশ্ববাসীর সামনে একটা রোল মডেলে পরিণত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ। গতিশীল নেতৃত্ব আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বিগত দুই দশকের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। এসডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, নেতৃত্ব ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু মৃত্যু ও মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাস, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা অর্জন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ নানান অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধি- শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও পরিশ্রমেরই ফসল। শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মত অন্তর দিয়ে এ দেশের মানুষকে ভালোবাসে তাই যে কোনে অর্জন শেখ হাসিনা বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেন। শেখ হাসিনার অধীনেই বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার জিডিপির আকার হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা। রফতানির আকার ৩ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মূদ্রার বাজার ১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ছাড়িয়েছে ১৮০ বিলিয়ে ডলারে।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপিতে আমরা বিশ্বের ৪১তম। মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ আরও অনেক দেশই লেজেগোবরে দশায় পতিত হয়। এমন কঠিন সময়ে অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। ১৮ বছরের শাসনকালে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ।