https://www.youtube.com/watch?v=HmgaDXfB4ck
এডিটরস টক: ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চায় আলোচ্য নির্বাচন কেমন প্রভাব রাখবে বলে মনে করেন?
আলোচক : শুধু নির্বাচন কেন্দ্র করে গণতন্ত্র বিচার করা যাবে না। আমাদের দেখতে হবে দুটি নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে গণতন্ত্র কীভাবে চর্চা করা হচ্ছে। নির্বাচন সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। আমাদের সংবিধানে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচনের জন্য একটি সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া আছে সংবিধানে। সে কারণেই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতামূলক ও ভালো হতো। কিন্তু সব দল অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচন ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো অপশন নেই। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হলে তাকে নির্বাচনের মাধ্যমেই যেতে হবে। অন্য কোনো পথ খোলা নেই। আমরা চাইব যেসব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তাদের সবার জন্য যেন সমান সুযোগ থাকে। কেউ যেন কোনো ধরনের বাধা না পায় এবং কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, এটা সরকার নিশ্চিত করতে চায়।
আমরা যখন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলব তখন সেখানে দেখতে হবে কয়টি দল অংশগ্রহণ করছে বা যে দলগুলো অংশগ্রহণ করছে, তাদের মধ্যে সমাজের ভেতরের মতামতগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকছে কি না। আরেকটি বিষয় দেখতে হবে আর তা হলো, যারা নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় তাদের সেই অধিকার সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না। নির্বাচন আমরা এভাবেই দেখলে ভালো হবে।
নির্বাচন হতে হবে এবং নির্বাচন সময়মতোই হবে। বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে নির্বাচন ছাড়া কোনোভাবেই সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়, ভবিষ্যতেও সেটা হবে না। সুতরাং রাষ্ট্র পরিচালনা ও মানুষের সেবা করার একমাত্র পথ নির্বাচন যা দেশপ্রেম এবং গণতন্ত্র উন্নত করতে করবে।
এডিটরস টক: নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন পর্যন্ত সময়টা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
আলোচক : নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সবাইকে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল, তাদের জনসমর্থন রয়েছে। নির্বাচনে না আসার কারণে বিএনপিকে সমর্থনকারী মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তাদের মনোভাব ও পছন্দ মানুষ জানতে পারবে না আবার মানুষও তাদের সমর্থন জানাতে পারছে না। সুতরাং এখানে ভোটারদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
বিএনপি নির্বাচন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য একটি শক্তিশালী বিরোধী দল সবসময় প্রয়োজন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বিগত বছরগুলোতে বিএনপি যদি নির্বাচন ও সংসদীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকত এবং যদি তারা বিরোধী দলেও থাকত, তাহলে সরকারের শাসন ও উন্নয়ন কয়েক মাত্রায় বৃদ্ধি পেত। আমরা দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন দেখতে পেতাম। কারণ আমরা এককভাবে যেসব সিদ্ধান্ত নেব তার সবগুলোই সঠিক হবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বিরোধী দলের কাজ হলো সেই ভুলক্রটিগুলো তুলে ধরে বিকল্প সমাধান দেওয়া। এভাবে গণতন্ত্রের চর্চা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।
আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। দেশের মানুষের নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে এবং তারা আলোচ্য নির্বাচন ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন। বিশেষ করে যারা প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছেন তাদের মধ্যে উৎসাহ বেশি। কোন দল নির্বাচনে এলো কী এলো না, সেটা নিয়ে তাদের ভাবনা নেই বললে চলে। তারা ভোটকেন্দ্রে যেতে এবং কীভাবে ভোট দিতে হয় সেটা দেখতে উৎসাহী।
এডিটর’স টক: মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তাদের জনসমর্থনও কম নয়। ভোটাররা কেন্দ্রে না গেলেই সফলতা ধরে নেবে বিএনপি। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আলোচক : সরকারের চেষ্টা ছিল কিন্তু বিষয়টা যেভাবে এগোনো উচিত ছিল হয়তো সেভাবে এগোয়নি। আমরা যদি সংলাপের প্রসঙ্গে আসি তাহলে দেখব, সংলাপে এমন একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যার জন্য সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। ফলে সংলাপের বিষয়টা দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। সংবিধান এমন একটা বিষয়, যা প্রতিদিন পরিবর্তন করা যায় না। বিএনপি এখন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে সেটা কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বাতিল হয়নি। এটা ছিল বিচার বিভাগের একটি রায়। যদি এমন হতো যে, আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর থাকবে না তাহলে বিষয়টা ভিন্ন হতো। আমাকে কিছু না কিছু মানতে হবে। সংবিধান মানতে হবে বা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তারা যখন এমন শর্ত দিয়ে রাখল যাতে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে, তখন আর সংলাপ এগোতে পারে না।
বিএনপির যদি এ ধরনের অবস্থান থাকত যে, খোলামনে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে তারা আগ্রহী, তাহলে সংলাপের একটি পরিবেশ সৃষ্টি হতো। সংলাপের জন্য তাদের শর্তই হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল অন্তরায়। এ পুরো প্রক্রিয়ায় আমরা কী শিক্ষা নেব? আগামীতে কেউ যদি কখনো সংলাপের কথা বলে, যদি আওয়ামী লীগ কখনো বিরোধী দলে যায় এবং সংলাপের কথা বলে তাহলেও আওয়ামী লীগ খোলামনে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইবে।
এডিটর’স টক : বাংলাদেশের নির্বাচন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। সরকারের ওপর এটি কোনো ধরনের চাপ তৈরি করছে কি?
আলোচক: আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। আমাদের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের চিন্তা আমাদের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করছে না। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের এক ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের কোনো উন্নয়ন সহযোগী যদি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কিছু বলে এবং আমরা যদি মনে করি সেই কথাগুলো বাংলাদেশের স্বার্থে বলা হচ্ছে তাহলে অবশ্যই আমরা সেই কথাগুলো বিবেচনা করব। তবে এটাকে আমরা কোনো চাপ হিসেবে দেখি না।
এডিটর’স টক : নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে আমেরিকা। শ্রম আইনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। বিষয়গুলো কি বিশেষ কোনো বার্তা বহন করছে?
আলোচক: ভিসা নীতি কোনো দলের বিষয় নয়। কেউ যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো দেশ কোনো ব্যবস্থা নিতে চায়, সেটা সেই দেশের বিষয়। আমরা আমাদের নিজস্ব মানদণ্ড নির্ধারণ করে নির্বাচন করব। বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমাদের কেউ যদি কোনো কথা বলতে চায় এবং সেই কথা যদি যৌক্তিক হয়, তাহলে সেটা আমরা বিবেচনা করব। বাংলাদেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে কেউ কোনো কথা বললে তা শুনতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে ভিসা নীতি বা এ বিষয়গুলোকে আমি চাপ হিসেবে দেখি না।
এডিটর’স টক: বাংলাদেশের অর্থনীতির আজকের পরিস্থিতির জন্য ব্যবস্থাপনাগত কোনো দুর্বলতা ছিল কি?
আলোচক: সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে এমন কথা আমার কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা থাকতে হবে। জবাবদিহি থাকতে হবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে কোনো ধরনের আপস করা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। আমি যদি ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচিত হই, তবে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে এসব বিষয়ে আমার অবস্থান একেবারেই পরিষ্কার থাকবে।
এডিটর’স টক: আগামীতে যদি আপনারা আবারও সরকার গঠন করতে পারেন তাহলে কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেবেন?
আলোচক: আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে। এ নির্বাচনী ইশতেহারটাই আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমাদের অঙ্গীকার। আমরা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকারগুলো নিয়ে কাজ করব। বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার বিষয় নিয়ে কাজ করব। আমরা উন্নয়ন বলতে শুধু মেগা প্রজেক্ট নয় বরং এমন বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দেব যেগুলো সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা সুশাসনের জন্য কাজ করব। দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করব। আমরা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করব। নতুন যে যুবসমাজ চাকরির বাজারে বা শ্রমবাজারে আসছে তাদের আমরা আশাবাদী করতে চাই। তাদের জন্য সেলফ এমপ্লয়মেন্টের ব্যবস্থা, ঋণ প্রদানের ব্যবস্থাসহ যা যা করার সবই আমরা করব। এর বাইরে আমরা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করব।
আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশে কথা বলি সেখানে আমরা চাই আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করতে। আমরা চাই যেন প্রত্যেক মানুষ বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সুফল পায়। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
এডিটর’স টক: ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ - ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে কি কোনো প্রভাব ফেলবে মনে করেন?
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘দিন বদলের সনদ’ নামে যে ইশতেহার দিয়েছিলো তাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা উল্লেখ করেছিলো।
এরপর প্রতিটি নির্বাচনেই এই ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাকে ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে দলটি।
এবার দ্বাদশ নির্বাচনের আগে দেয়া ইশতেহারে দলটি ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের’ বিষয়টি তুলে ধরে বলেছে “২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২৫, ২০৩১, ২০৪১- সময়রেখার মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত হয়ে তৈরি করবে স্মার্ট বাংলাদেশ।”
স্মার্ট বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত যে ব্যাখ্যা ইশতেহারে দেয়া আছে তাতে বলা হয়েছে-‘স্মার্ট বাংলাদেশের রয়েছে চারটি স্তম্ভ- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ’।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের কাজ শুরু করে একটা পর্যায়ে দেশকে নিয়ে এসেছে।
“অনেক উদ্যোগের ফলে একটি স্মার্ট সমাজের ভিত্তি তৈরি হয়েছে। সে কারণেই এবার স্মার্ট বাংলাদেশের স্লোগান এসেছে,”।