জাহিদ ইউ জেড সাঈদ
অফিস কর্মীরা আজকাল পায়জামার সাথে ব্লেজারগুলি অদলবদল করছেন, ডেস্ক আর চেয়ারে জায়গা দখল করেছে সোফা,ডিভান, মাস্টার বেড । করোনভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ফলে আমাদের অনেকের কাজ করার ধরন বদলে গেছে - এবং আমরা সম্ভবত এটিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি।
প্রায় এক মাস ধরে বাড়ি থেকে কাজ করছি এবং, আমি আপনাকে বলি, এটি মজাদার এবং হতাশাব্যঞ্জক এবং ফলপ্রসূ এবং উত্তেজক - সব একই সময়ে,একই সাথে।
কাজের মাঝে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বিরতি নিচ্ছি,কখনো কফি বানাতে অথবা ফ্রিজে কী আছে তা যাচাই করতে কিম্বা গান শুনে, কখনোবা টিভির সামনে।কাজ, কাজের মাঝে নিজের মতন করে সময় নেয়া।অপার স্বাধীনতা।
বর্তমানে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজের বাড়ির সীমানায় বন্দী হয়ে সম্ভবত একই রকম অভিজ্ঞতা লাভ করছে। করোনভাইরাস দূরবর্তী কাজকে হঠাৎ করে বাস্তব করে তুলেছে। হ্যাঁ, লোকেরা আগেও এটি করেছে। এবং হ্যাঁ, প্রযুক্তিগত স্টার্টআপস, ডিজিটাল নোমেডস এবং নতুন কাজের গুরুরা দীর্ঘকাল ধরে এর উত্পাদনশীলতা এবং সুখকর সুবিধাগুলির প্রশংসা করেছেন। তবে সকলেই আধুনিক প্রযুক্তির সম্ভাবনা গ্রহণ করতে একেবারেই আগ্রহী ছিল না।
উদাহরণস্বরূপ জার্মানিনে ধরা যেতে পারে। কর্মসংস্থান গবেষণার জন্য আইএবি ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার আগে, চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি প্রতিষ্টান তাদের কিছু কর্মচারীকে বাড়ি থেকে কাজ করতে দেয়। মাত্র বিশ শতাংশ শ্রমিক তা ব্যবহার করেছেন। এবং যারা বাড়ি থেকে কাজ করেননি তাদের বেশিরভাগই বলেছিলেন যে তারা আসলে প্রতিদিন অফিসে যেতে চান।
আমরা কি ডাব্লুএফএইচ বিপ্লবের মাঝে আছি?
অনুমান করতে পার কি, এখন তারা কি করছে? যারা য়দিন আগেও অফিসে ছাড়া কাজ করতে চায় নি, তারা এখন বাসাকে তাদের অফিস বানিয়ে নিয়েছে।সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ দেশসমুহ - হোম থেকে একটি বিশাল কর্মক্ষেত্রে পরিনত করেছে।
পৃথিবী স্বাভাবিকতায় ফিরে আসার পরে কী কর্মজীবন আগের ছন্দে চলতে থাকবে এই প্রশ্নটি এখন সামনে চলে আসছে। অন্তত তাদের জন্য যারা তাত্ত্বিকভাবে বাসা থেকে কাজ করতে চিন্তা করছে।
আমরা কি আমাদের ল্যাপটপগুলি প্যাক করে অফিসে ফিরে যাব? অথবা আগামী কয়েক সপ্তাহ এবং মাস প্রমাণ করবে যে কাজের মডেল কোনটি কার্যকর হবে।
“আমি বিশ্বাস করি এটি সত্যিই পরিবর্তন আসবে,” ফ্রেঞ্চহোফার ইনস্টিটিউট ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জোসেফাইন হফম্যান মনে করেন যে ,সংস্থাগুলি লোকদের বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ ইতিবাচকভাবে দেখতে শুরু হয়েছে, এখন একমাত্র বিকল্প হ’ল তাদের কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া।
কীভাবে সফলভাবে বাড়ি থেকে কাজ করবেন
বেশি সময় নিতে পারে অথচ ইফেক্টিভ নয় কিম্বা আলোচনার প্রথম পর্যায়ের মিটিং গুলোতে সরাসরি উপস্থিতির জাইগা নিতে পারে ইমেল। ফ্লাই-ইন-ফ্লাই-আউট ব্যবসায়ের অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলি ভিডিও কনফারেন্স হতে পারে। এই বিষয়গুলি সঙ্কটের পরেও স্থির রাখতে পারে এবং সংস্থাগুলি তাদের দূরবর্তী কাজের অবকাঠামোগত র্যাম্প তৈরি করতে পারে। “এটি আমাদের গ্রহ, আমাদের জলবায়ু এবং কাজের আরও টেকসই পদ্ধতির স্বার্থে এই পদ্ধতি খুব কাজে আসবে,” হোফম্যান বলেন।
চীন থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে
চীনের কেস স্টাডি দেখে প্রথমেই মনে হবে এই স্থানান্তরকে উৎসাহ দেওয়া উচিৎ। ট্র্যাভেল এজেন্সি সিটি্রিপ তার কল সেন্টারের কিছু কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করার অনুমতি দেয়। একদল অর্থনীতিবিদ এর প্রভাব পরিমাপ করেছেন এবং তারা এই পদ্ধতিতে কর্মীদের সুখী মনে কাজ করতে দেখেছে, উৎপাদনশীলতা বেড়েছে এবং অফিসের কম জাইগা লাগছে যার ফলে সংস্থার অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।
আসলে, পরীক্ষাটি এতটাই সফল হয়েছিল যে পরিচালনা পরিষদ তাড়াতাড়ি এটি পুরো সংস্থায় প্রসারিত করে। কেবল এটি মনিটরিং করা দরকার যে ,বাড়ি থেকে কাজ করছে প্রত্যেকে। তাদের সুপারভাইজাররা কেবল অফিসে বসে সুপারভাইজ করবে। সিটি্রিপ-এ কিছু লোক দূরবর্তী কাজ উপভোগ করতে না পারার মূল কারণ হ’ল তারা একাকীত্ব বোধ করেছিল।
সহকর্মীদের সাহচর্য নিতে চাইলে তাদের সাথে ইমেল, ম্যাসেজ, ফোন কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে- এমনকি কাজের শেষে ভিডিও চ্যাটে একসাথে কফির আড্ডা বসতে পারে।
ভবিষ্যত বিশ্বের সেরা ধারণ
“সমাধানটি হ’ল সঠিক মুহূর্তে সঠিক জায়গা থেকে কাজ করা,” ট্রাইস্টান হরক্স আমাকে স্কাইপে জানিয়েছেন। তিনি জার্মানি জুউকুনফাস্টিনস্টিট-এর জন্য কাজ করেন, এটি একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক যা ভবিষ্যতের প্রবণতাগুলি নিয়ে গবেষণা করে। তিনি বলেছেন যে বিভিন্ন পরিবেশ বিভিন্ন ধরণের কাজের পক্ষে - এবং কর্মচারীরা আরও কাজের পদ্ধতি সন্ধান করতে আগ্রহী হবে।
এর অর্থ শ্রমিকরা পৃথক কাজগুলি সামাল দিতে পারে যার জন্য ভবিষ্যতে বাড়ি থেকে প্রচুর ফোকাসের প্রয়োজন হয় এবং যখন তাদের একসাথে প্রকল্পে কাজ করার প্রয়োজন হয় তখন অফিসে যেতে পারেন। যদিও ওয়ার্কিং ওয়ার্ল্ড যেভাবেই এই দিকে এগিয়ে চলেছে, তিনি মনে করেন বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তনের গতি বাড়িয়ে দেবে। “যদি আপনার এখনই অনেক ডিজিটাল সভা হয় তবে আপনি খেয়াল করবেন যে একটি অ্যানালগ বৈঠকে সত্যিকারের সহযোগী সৃজনশীল প্রক্রিয়া আরও কত ভাল।”
সুতরাং হ্যাঁ, করোনভাইরাসটি সম্ভবত আমাদের কাজ করার পদ্ধতি পরিবর্তন করবে। কারণ যদি সংস্থাগুলি বুঝতে পারে যে যখন তাদের লোকেরা ঘরে বসে এই সঙ্কটটি সমাধান করতে পারে তবে পার্কে বসেও যথারীতি ব্যবসা করা যেতে পারে। অথবা সম্ভবত আমার বসার ঘরে একটি নির্দিষ্ট স্থান অফিস হতে পারে।
বাড়িই এখন অফিস’, বললেন নরেন্দ্র মোদীও
করোনা-পরবর্তী জগতে অফিসের চেহারা অনেকটাই বদলে যাবে বলে মত বহু বিশেষজ্ঞের। আজ সে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। নয়া ব্যবসায়িক মডেলের সন্ধানে ভারতের তরুণ প্রজন্ম বড় ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। মোদীর মতে, করোনা-পরবর্তী জগতে বিশ্বে পণ্য সরবরাহের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে ভারত।
এ দিন পেশাদারি সংযোগের ওয়েবসাইট ‘লিঙ্কডইন’-এ নিজের বক্তব্য জানান মোদী। পরে তা টুইটও করেন। ওই পোস্টে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এই শতাব্দীর তৃতীয় দশক শুরু হয়েছে নানা ধাক্কার মধ্য দিয়ে। করোনাভাইরাসের ফলে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমে মানুষ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বাড়িতে থাকার বার্তা দিতে আমাদের অভিনেতারা নতুন উপায়ে কয়েকটি ভিডিও তৈরি করেছেন। গায়কেরা করেছেন অনলাইন অনুষ্ঠান। দাবা খেলোয়াড়েরা ডিজিটাল মাধ্যমে দাবা খেলে এই যুদ্ধে সাহায্য করেছেন।‘
মোদীর মতে, পেশাদার জীবনের চেহারা বদলে দিয়েছে করোনা-পরিস্থিতি। এখন বাড়িই অফিস। বৈঠকের নতুন জায়গা ইন্টারনেট। অফিসের ফাঁকে সহকর্মীদের সঙ্গে গল্পগুজব আপাতত ইতিহাস। এখন মন্ত্রিসভার সহকর্মী, আধিকারিক বা রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে বেশির ভাগ বৈঠকই করি ভিডিওতে।’’ সকলকে নিয়ে চলার ক্ষমতা, সুযোগ ও গোটা বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে— এমনই ব্যবসায়িক ও জীবনযাত্রার মডেলের এখন খোঁজ করা উচিত বলে মনে করেন নরেন্দ্র মোদী। যে মডেলে সঙ্কটকালেও অফিস ও ব্যবসা-বাণিজ্য চলতে পারে। এতে ভারতের উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন তরুণ প্রজন্ম বড় ভূমিকা নিতে পারে বলে আশাবাদী মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘অফিসে বা কারখানায় বসে কাজ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে কাজের ঠিকঠাক মিশেল ঘটাতে পারলে ভারত বিশ্বে পণ্য সরবরাহের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এই সুযোগকে ব্যবহার করতে হবে।‘